ভারতের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

পোস্টটি শেয়ার করুন

ভারতের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী। গঠন ও কার্যাবলী।  

রাজ্যের বিচার বিভাগের শীর্ষে হাইকোর্টের অবস্থান । সংবিধান অনুসারে ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে ।

আমরা প্রত্যেকে হাইকোর্ট সম্পর্কে জানতে খুব আগ্রহী থাকি । 

এইজন্য আমরা অনলাইনে সার্চ করি যেমন – ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী । ভারতের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী । হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ।

অবশ্য পার্লামেন্ট  আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে । 

আশা করি এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে ।

ভারতের হাইকোর্টের গঠন 

রাজ্যের হাইকোর্ট গুলো কতজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হবে , সে বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। সংবিধানে কেবল একথাই হয়েছে যে, একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য কয়েকজন বিচারপতি – কে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে। 

তাই বিভিন্ন হাইকোর্টে বিচারপতিদের সংখ্যার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা নিরূপন করেন।

তাছাড়া , প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্রপতি অনাধিক ২ বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি বা অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন।

হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যবলী 


ভারতীয় সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী যেরূপ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে , হাইকোর্টের ক্ষেত্রে কিন্তু সেইরূপ করা হয় নি। সংবিধানে বলা হয়েছে যে , সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে হাইকোর্ট সমূহ যেসব ক্ষমতা ভোগ করতেন , সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার পরেও তাঁরা অনুরূপ ক্ষমতা ভোগ করবেন।

তবে সর্বক্ষেত্রেই তাঁদের সংবিধান এবং যথাযোগ্য আইনসভার ব্যবহৃত আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। 

হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে নিম্নলিখিত সাতটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে…

আরও পড়ুন – লোক আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

ক ) মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা 

১) রাজস্ব – সংক্রান্ত সব বিষয়ই হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতার অন্তর্গত ।

২) তা ছাড়া , অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়।

 তবে কেবল কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাই হাইকোর্ট দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার প্রথম বিচার করতে পারেন।

কিন্তু ১৯৭৩ সালে ফৌজদারি দণ্ডবিধি পরিবর্তিত হওয়ার ফলে হাইকোর্টের ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতার বিলোপ সাধন করা হয়েছে।

বর্তমানে কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাই শহরে ফৌজদারি মামলার বিচার নগর দায়রা আদালতে সম্পাদিত হয়।

খ ) আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা 

হাইকোর্টে রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে –

১) জেলা জজ এবং অধস্তন জেলা জজের প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।

২) কেবল আইন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে কোনো অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় কোনো ঊর্ধ্বতন আদালত যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে। 

৩) হাইকোর্টের কোন বিচারকের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। 

ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে –

i ) দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে ৭ বছরের অধিক কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে।

ii ) কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা অন্যান্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।

গ ) নির্দেশ , আদেশ বা লেখ জারির ক্ষমতা 

নিজ এলাকাভুক্ত ভৌগলিক সীমানার মধ্যে বসবাস – কারী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব হাইকোর্টের হাতে দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট এই অধিকারগুলো সংরক্ষণের জন্য বন্দি – প্রত্যক্ষীরণ , পরমাদেশ, প্রতিষোধ , অধিকার, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখা , নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারেন ( ২২৬ – ১ নং ধারা ) ।

নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহের সংরক্ষণ ছাড়াও ‘ অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে সক্ষম। 

কিন্তু এই ক্ষমতা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের হাতে অর্পিত হয় নি। 

ঘ ) আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা 

মূল সংবিধানে হাইকোর্টের হাতে কেন্দ্রীয় আইন ও রাজ্য আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছিল। কিন্তু ৪২ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে হাইকোর্টের হাত থেকে কেন্দ্রীয় আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলেও ১৯৭৮ সালে ৪৩ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তদানীন্তন দেশাই সরকার সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনে।

ঙ ) তত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতা 

হাইকোর্ট নিজের এলাকার অধীন সামরিক আদালত ও ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্যান্য আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল – সমূহের তত্ত্বাবধান করতে পারেন। এই ক্ষমতার দ্বারা হাইকোর্ট যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার জন্য অধস্তন আদালতসমূহ কে নির্দেশ দিতে সক্ষম। 

অধস্তন আদালতের কর্মচারীগণ কীভাবে নথিপত্র এবং হিসাবপত্র রক্ষা করবে , সে বিষয়েও নির্দেশ দানের ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে।

চ ) মামলা অধিগ্রহনের ক্ষমতা 

অধস্তন কোনো আদালতের বিচারাধীন কোনো মামলার সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে বলে মনে করলে সংশ্লিষ্ট মামলাটির বিচারের দায়িত্ব নিজের হাতে গ্রহণ করতে পারেন।

ছ ) নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা 

হাইকোর্ট অধস্তন আদালতগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। 

জেলা জজের নিয়োগ, বদলি , পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে এবং অধস্তন আদালতসমূহের অন্যান্য বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল হাইকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। 

জেলা আদালতসহ অন্যান্য অধস্তন আদালতের কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ , পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে হাইকোর্ট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জ ) অন্যান্য ক্ষমতা 

উপরের ক্ষমতাবলি ছাড়াও হাইকোর্টের আরও কিছু ক্ষমতা আছে যেমন –

১) সুপ্রিম কোর্টের মতো হাইকোর্ট কেও অভিলেখ আদালত হিসেবে কাজ করতে হয়। 

২) হাইকোর্ট নিজ অবমাননার জন্য অপরাধীদের শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে পারেন।

৩) হাইকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী তৈরি করার অধিকারী।


আরও পড়ুন – ভারতের সুপ্রিম ও হাইকোর্টের বিচারপতির নিয়োগ , যোগ্যতা , মেয়াদ, ক্ষমতা। 

আরও পড়ুন – ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবদান। 

আশা করি এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। 

আপনি যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টটি থেকে পেয়েছেন তা হলো – ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী । ভারতের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী । হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টটি পড়ার জন্য।

বিঃদ্রঃ – পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে নিচের শেয়ার বটম এ ক্লিক করে পোস্টটি ফেইসবুক , হোয়াটস্যাপ , টুইটার এ শেয়ার করতে ভুলবেন না


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment