ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়

পোস্টটি শেয়ার করুন

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়

আপনি কি ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায় গুলি সম্পর্কে জানতে চান

যদি তাই হয় এই পোস্টটি আপনার জন্য।

আপনি এই পোস্টটিতে ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন ।

পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ে সবকিছু জেনে নিন

ডায়াবেটিস মেলিটাস

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায় – ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগের বিবরণ, আক্রান্ত তন্ত্র, আক্রমনের বয়স, আক্রান্ত লিঙ্গ, ডায়াবেটিস রোগের কারণ সম্পর্কে জানুন ।

রোগের বিবরণ

রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এবং তার মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়াকে মধুমেহ বা ডায়াবেটিস মেলিটাস বলা হয়।

আক্রান্ত তন্ত্র

অন্তঃক্ষরাতন্ত্র ও বিপাকতন্ত্র এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়।

আক্রমনের বয়স

ডায়াবেটিস রোগ কেবলমাত্র বয়স্কদেরই হয় এবং ৩০ বছরের উর্ধ্বেই বেশি হতে দেখা যায়।

আক্রান্ত লিঙ্গ

পরুষ এবং মহিলা উভয়েই সমানভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বংশগত কারণ থাকতে দেখা যায়।

ডায়াবেটিস রোগের কারণ

অগ্ন্যাশয়ের বিশেষ কোষ আইলেটস অব লাঙ্গারহ্যান্স – নিঃসৃত ইনসুলিন মানুষের শরীরে গ্লুকোজকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়।

কিন্তু আইলেটস অব লাঙ্গারহ্যান্স – এর কর্মক্ষমতার অভাবে ইনসুলিন তৈরি কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ঐ গ্লুকোজ কোন কাজে লাগে না তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তা প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হতে থাকে। এই ঘটনা ঘটে সাধারণত বংশগত কারণে এবং খুব মোটা মেদবহুল শরীর সৃষ্টি হলে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও করণীয় 

এই ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ, রোগ নির্ণয়, জটিল উপসর্গ, চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করলাম ।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো হল

১. বহুল পরিমাণে মূএ নিঃসরণ হতে থাকে।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।

৩. তীব্র পিপাসা।

৪. মূত্রে শর্করা নির্গত হতে থাকে।

৫. ওজন হ্রাস পায়।

৬. দৃষ্টি শক্তি কমে যায়।

৭. চর্মরোগে বিশেষতঃ ফোঁড়া, কার্বাঙ্কল প্রভৃতি দারুনভাবে হতে থাকে।

৮. দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাধরা প্রভৃতি হতে থাকে।

৯. রোগ খুব বেড়ে গেলে কাঁপুনিসহ সামান্য জ্বর আসা এবং তা কমে যাওয়া ঘটে।

আরও পড়ুন ক্লিক করে – বদহজমের কারণ ও তার প্রতিকার

রোগ নির্ণয়

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়  –  রোগের লক্ষণ অনুযায়ী

১. রক্ত পরীক্ষায় – sugar fasting ( উপবাসে  শর্করা – ১৪০ মিগ্রা / ১০০ মিলির উপরে থাকে।

২. রক্ত পরীক্ষায় – sugar post prandial ( খাবার পর শর্করা )  – ১৫০ মিগ্রা / ১০০ মিলির উপরে থাকে। আপেক্ষিক গুরুত্ব বেড়ে যায়।

৩. প্রস্রাব পরীক্ষায় – সুগার থাকে। তবে প্রস্রাবে সুগার থাকলেই ডায়াবেটিস মেলিটাস বলে ধরা যাবে না, যদি না রক্তে গ্লুকোজ বেশি থাকে।

জটিল উপসর্গ

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায় – রোগ মারাত্মক বেড়ে গেলে বা চিকিৎসা না হলে বিভিন্ন জটিল উপসর্গ হতে দেখা যায়…

১. Peripheral Neuropathy অর্থাৎ  প্রান্তস্হ স্নায়ুর দুর্বলতা হতে দেখা যায়।

২. Proliferative retinopath অর্থাৎ অক্ষিপটের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে অন্ধন্ত আসতে পারে। ছানি, ঝাপসা দৃষ্টি প্রভৃতিও হয়ে যায় অনেক সময়।

৩. Nephropathy অর্থাৎ কিডনির গোলযোগ হয়ে প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে।

৪. চর্মের বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

৫. ডায়বেটিক কোমা অর্থাৎ রোগী একটানা বহুদিন আচ্ছন্নভাব হয়ে পড়ে থাকে। চামড়ার শুষ্কতা, জিহ্বার শুষ্কতা, রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হওয়া প্রভৃতি হতে দেখা যায়।

৬. বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণ হতে দেখা যায়।

৭. রক্তবাহের কাঠিন্যতা প্রাপ্তি অর্থাৎ Arteriosclerosis হতে দেখা যায়।

চিকিৎসা

মৃদুরোগের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম শুধুমাত্র খাদ্যসংযমের দ্বারা রোগ নিরাময় সম্ভপর হয়। তাতে কোন‌ ফল না হলে থাদ্যসংযম ও চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়ার ওষুধ একত্রে ব্যবহার করতে হয়।

রোগ মারাত্মক বেড়ে গেলে বা খাওয়ার ঔষুধ রোগ নিরাময়ে ব্যর্থ হলে ইনসুলিন প্রয়োগ করতে হয়।

আরও পড়ুন ক্লিক করে – বমি বমি ভাব হলে কি করব

ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট এবং খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার 

মিষ্ট দ্রব্য, চিনি, গুড়, সন্দেশ, লজেন্স, চকোলেট, টফি, জ্যাম, জেলি, মধু, বিস্কুট, কেক, ফুড প্রোডাক্টস, মিষ্টি ফল – মূল ইত্যাদি।

সামান্য পরিমাণে খাওয়া চলবে

ভাত, মুড়ি, চিঁড়া, আলু, রাঙা আলু, কচু, রুটি, ডাল, ছোলা, বাদাম, দুধ, দই, ননী ইত্যাদি।

স্বাভাবিক পরিমাণে খাওয়া চলবে

হাল্কা ঝোল, আটার রুটি, সবুজ শাকসবজি, চিনি ও দুধ ছাড়া চা বা কফি, ছানা, ডিম সিদ্ধ, মাছ, মাংস, শশা, টম্যাটো, আমলকী, মোচা, পেঁয়াজ, সিম, বরবটি, নারকেল, ঘি ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

সকাল ৬ টার সময়

রুটি, ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুট, লিকার চা বা কফি, ডিম সিদ্ধ, স্যালাড, ম্যাকারোনি, মার্জারিন ইত্যাদি।

২ – ৩ ঘন্টা পর

মুড়ি, শশা, ছোলা – মটর ভেজানো, পাতলা দুধ ইত্যাদি।

দুপুর ১২ টার সময়

অল্প পরিমাণে ভাত, ১ টুকরো সিদ্ধ আলু, হালকা ঝোল, সবুজ শাকসবজি সিদ্ধ বা ভাজা, মাছ ( চারা পোনা ), সামান্য দই ইত্যাদি খাওয়া চলবে।

বিকাল ৪ টার সময়

আটার রুটি, সবুজ শাকসবজি, ছোলা বা মটর সিদ্ধ, ছানা, স্যালাড, ম্যাকারোনি ইত্যাদি খাওয়া চলবে।

চা, কফি বা সরবত – এর স্বাদ মিষ্ট করতে নিচের ট্যাবলেট ব্যবহার করা যাবে।

One-up Pellets ( ওয়ান আপ পিলেটস )

অথবা Equal Tablet ( ইক্যুয়াল ট্যাবলেট )

অথবাSugar free Tablet(সুগার ফ্রি ট্যাবলেট)

অথবা Aspa Sweet Tablet (অ্যাসপা স্যুইট ট্যাবলেট )

১ – ২ টি করে ট্যাবলেট ১ কাপ তরলে মেশাতে হবে।

মূত্রমেহ(ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস)

ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায় – রোগের বিবরণ, আক্রান্ত তন্ত্র, আক্রমনের বয়স, আক্রান্ত লিঙ্গ, ডায়াবেটিস রোগের কারণ সম্পর্কে জানুন ।

রোগের বিবরণ 

শরীরে জলসাম্যতা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হওয়া এবং ভ্যাসোপ্রোসিন হর্মোন ক্ষরণ কম হওয়াকে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বলা হয়।

আক্রান্ত তন্ত্র

অন্তঃক্ষরা ও বিপাকতন্ত্র এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়।

আক্রমনের বয়স

যে কোন বয়সেই ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগ হতে পারে।

আক্রান্ত লিঙ্গ 

মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়। বংশগত কারণ যথেষ্ট রয়েছে।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগের কারণ

হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থির ক্ষরণ কম হওয়া, কিডনির রোগে ভোগা, প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া, লিথিয়াম, ডেমেক্লোসাইক্লিন, মেথোক্সিফ্লুরেন প্রভৃতি ঔষধ বেশি মাত্রায় খাওয়া প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে এই রোগ হয়।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগের লক্ষণ

১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা এই রোগের একটি লক্ষণ।

২. বারংবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব ধারনের অক্ষমতা দেখা দেওয়া।

৩. জলশূন্যতা ( Dehydration ) হওয়া।

৪. দৃষ্টির গোলযোগ।

৫. মাথাধরা, গা – হাত ম্যাজম্যাজ করা প্রভৃতিও হতে পারে।

রোগের লক্ষণ অনুযায়ী প্রস্রাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব কম হয়। শর্করা থাকে না।

আনুষঙ্গিক চিকিৎসা

মিষ্টদ্রব্য ও শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খেতে হবে। লবণ ও জল কম খেতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া ভাল।


ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগ হলে একজন উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এবং উপরের সমস্ত জিনিস মেনে চলুন।

আরও পড়ুন ক্লিক করে – হাঁপানি রোগ থেকে বাঁচার উপাই।

আশা করি আপনি ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায় এবং ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এই পোস্টটি থেকে।

আশা করি আপনি যা জানতে চেয়েছিলেন তা এই পোস্টটি থেকে জানতে পেরেছেন ।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য ।

এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment