দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায়

দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায়।হাইব্রিড ও দেশি মাগুর।

পোস্টটি শেয়ার করুন

আপনি কি হাইব্রিড ও দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান।

যদি সেটাই হয়,

আপনি সঠিক পোস্টে এসেছেন।

আমি এই পোস্টটিতে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি – হাইব্রিড ও দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায়, হাইব্রিড মাগুর ও দেশি মাগুরের ডিম পারার পার্থক্য ইত্যাদি।

এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে পড়ুন আর জ্ঞান অর্জন করুন ।

দেশি মাগুর। আফ্রিকান মাগুর। থাই মাগুর।

আমাদের দেশে বর্তমানে তিনটি প্রজাতির মাগুর মাছ পাওয়া যায় – দেশি মাগুর বা এশিয়ান ক্যাটফিশ, আফ্রিকান মাগুর বা আফ্রিকান ক্যাটফিশ এবং থাই মাগুর বা থাই ক্যাটফিশ।

এ ছাড়া আফ্রিকান মাগুরের সাথে দেশি মাগুরের প্রজনের ফলে এক নতুন ধরনের মাগুর তৈরি হচ্ছে।

এদের মধ্যে থাই মাগুর অল্প সংখ্যায় পাওয়া যায়। 

বাজারে মাগুর কেনার আগে দেখে কিনুন, চাষের পুকুরেও বাচ্চা মাগুর ছাড়ার আগে লক্ষ রাখুন বিশেষ বৈশিষ্ট্যর ওপর, যা দেখে সহজেই চিনে নিতে পারবেন। 

হাইব্রিড মাগুর বলে আমরা যাকে চিনি আসলে সেটা আফ্রিকান ক্যাটফিশ – একটি ‘ এলিয়েন ‘ মাছ। 

দেশি মাগুরের সাথে এই মাগুর প্রায় এক রকম দেখতে হলেও সহজেই এদের চিনে নেওয়া যায়। 

আফ্রিকান ক্যাটফিশ, হাইব্রিড মাগুর বা রাক্ষুসে মাগুর হিসেবেই সাধারণত পরিচিত, একে ‘ এলিয়েন মাছ ‘ ও বলে।‌

আশির দশকের প্রথম দিকে আফ্রিকান মাগুর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। মাছটি প্রথমে ব্রাজিল, ভিয়েতনামে, ইন্দোনেশিয়া হয়ে পরে ভারতে এসেছে বলে অনুমান করা হয়। 

সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভারতে এসেছে।

আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নেটিভ এই মাছ মিষ্টি জল, নর্দমা, জলাজমি এবং শহুরে নিকাশি ব্যবস্থায় বাস করতে পারে।

আরও পড়ুন ক্লিক করে – মাছ চাষের সমস্যা ও সমাধান ।

আফ্রিকান মাগুর কেন চাষ করা হয়

যদিও ভারত সরকার ২০০০ সালে পুকুর ও ট্যাঙ্কগুলিতে আফ্রিকান মাগুর চাষ নিষিদ্ধ করেছিল এবং এই প্রজাতির মাছচাষ অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়। 

 তবে কিছু মাছ চাষির কাছে এই মাছ খুব জনপ্রিয়। তার কারণ কী?

আফ্রিকান মাগুর মাছ চাষিদের মধ্যে জনপ্রিয়,

কারণ এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, প্রতিকুল জলের গুণমান সহ্য করতে পারে এবং অধিক ঘন সংখ্যাতে মাছগুলি বেড়ে উঠতে পারে।

শুধু তাই নয়, এরা দীর্ঘ সময়ের জন্য অগভীর কাদায় বেঁচে থাকতে পারে। 

এরা সর্বভুক, তাই এদেরকে মুরগির নাড়ি – ভুঁড়ি, রক্ত ইত্যাদি থেকে শুরু করে যেকোনও খাবার অতি সহজেই দেওয়া যায়।

এদের রাক্ষুসে স্বভাবে এরা সবকিছুই গ্রাস করে।

দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অল্প সময়ে আর্থিক লাভবানের আশায় মাছ চাষিরা এই আফ্রিকান মাগুর চাষে আগ্রহী হন।

আফ্রিকান মাগুর চাষ কেন নিষিদ্ধ করা হল

তবে যেখানে মাছ চাষিরা আর্থিক লাভবান হচ্ছেন সেখানে দাঁড়িয়ে সরকার এই মাছ কেন – ই – বা নিষিদ্ধ করল? 

আমরা মৎস দফতরের পক্ষ থেকে মাছ চাষিদের এই আফ্রিকান মাগুর চাষের ক্ষতির দিক গুলো তুলে ধরি, যাতে চাষি ভাইয়েরা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হন। 

আসলে পরিবেশ ও বাস্ততন্ত্রের ওপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। 

এটি ভারতীয় মাছ প্রজাতির জন্য একটি বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন?

আফ্রিকান মাগুর যদি প্রাকৃতিক জলাশয়ে চলে যায়, তবে জিনগত প্রভাব, রোগের ভূমিকা, প্রতিযোগিতা এবং পরিবেশগত সংশোধন যেমন বিপর্যয়মূলক পরিবেশগত প্রভাবগুলির মাধ্যমে স্থানীয় মাছ প্রজাতিকে প্রভাবিত করবে। 

যা স্থানীয় জলজ প্রজাতির অস্তিত্বের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে। 

দেশি মাগুর প্রজাতি এই আফ্রিকান মাগুরের কারণে বিপন্ন হতে পারে। 

আবার আফ্রিকান মাগুর যদি দেশি মাগুরের সঙ্গে প্রজনন করে, তবে তাদের মধ্যে ‘ ব্যাক ক্রস ‘ ঘটে।

তখন তাদের বংশধররা কিছুটা বন্ধ্যা হয়।

এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের বা বাস্তুতন্ত্রের অবস্থাকে নষ্ট করে। আর তাই আফ্রিকান মাগুরের চাষে সরকারি ভাবে উৎসাহ দেওয়া হয় না। 

হাইব্রিড মাগুর ও দেশি মাগুরের ডিম পারার পার্থক্য

এটি একটি ভয়ঙ্কর রাক্ষুসে প্রজাতি। যেকোনো পরিবেশেই মানিয়ে নিতে পারে এই ‘ এলিয়েন মাছ ‘। 

আফ্রিকান মাগুরের খাদ্য ও প্রজনন স্থানগুলি অন্যান্য স্থানিয় প্রজাতিকে বঞ্চিত করে। 

এরা দ্রুত বৃদ্ধি, অধিক ডিম উৎপাদন ও উচ্চ বেঁচে থাকা হারের কারণে বিঘ্নিত বাস্তুতন্ত্রের সহজেই বৃদ্ধি পায়।

যেখানে একটি আফ্রিকান হাইব্রিড মাগুর এক ঋতুতে ৪ লক্ষ ডিম পারতে পারে, 

সেখানে অনেক কম ডিম পাড়ে একটি স্থানীয় দেশি প্রজাতির মাগুর ( ৭ – ১৫ হাজার ডিম )। 

দ্রুত প্রজনের ফলে এটি অন্যান্য স্থানীয় প্রজাতির উপর একটি প্রভাব ফেলে দেয়।

বিজ্ঞানীরা এই সব কারণে এই আফ্রিকান ক্যাটফিশ বা হাইব্রিড মাগুর প্রজাতিকে একটি বড় বিপদ বলে অভিহিত করেছেন।

ছোট অবস্থায় পার্থক্য

বর্তমানে এ দেশে আফ্রিকান মাগুরের প্রবেশের ফলে অনেক দেশি ও বিদেশি মাগুরের তফাত হঠাৎ করে বুঝতে পারে না।

ছোট অবস্থায় এই তিন ধরনের মাগুর দেখতে প্রায়ই একই রকম।

এই ‘ ক্লারিয়াস ‘ গণের মাগুর মাছগুলি আপাতদৃষ্টিতে একই রকম মনে হলেও অনেক পার্থক্য থাকে। একটু খেয়াল করলেই সহজেই এদের চিনে নেওয়া যায়।

দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায়। হাইব্রিড ও দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায়।

মূলত দেহের রঙের উপর ভিত্তি করে চেনা গেলেও, মাছের এই রঙ জলাশয়ের গুণাগুণের ওপরেও খানিকটা নির্ভর করে।

তাই অনেক ক্ষেত্রে চেনা কঠিন হয়ে যায়। 

যেমন আফ্রিকান মাগুর যদি আধিক নোংরা জলে চাষ হয় তবে ‘ স্ট্রেস ‘ – এর প্রভাবে এদের গায়ে কালো কালো ছোপ দেখা যেতে পারে।

আফ্রিকান মাগুরের গায়ের রং অন্য দুই মাগুর মাছের থেকে আলাদা।

এদের গায়ের রং হালকা ছাই এবং পেটের দিক সাদা। দেশি মাগুর মাছের গায়ের রং কালচে বা হলুদভ হয়।

হাইব্রিড ও দেশি মাগুরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

এদের সনাক্তকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মাথার খুলির খাঁজ।

দেশি মাগুরের মতোই প্রায় এক রকমের দেখতে এই মাগুর গুলি। 

 ক্ল্যারিয়াস মাক্রোসেফালাস বা থাই মাগুরের মাথাটা গোলাকৃতি, মাথার খুলির খাঁজ ইংরেজি U অক্ষরের মতো, এদের দেহে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। 

আর দেশি মাগুরের মাথাটা অনেকটা সূচালো হয়।

আফ্রিকান মাগুরের দেহের রঙ গাঢ় কালো ও পেটের ভেতরের দিকে ধূসর সাদা রঙের। 

মাথার খুলির খাঁজ ইংরেজি W অক্ষরের মতো। অর্থাৎ এদের মাথার খুলির খাঁজে তিনটি সূচালো কোণ বিদ্যমান।

যেখানে দেশি মাগুরের একটি সূচালো কোণ থাকে, মাথার ওপরের দিকে খাঁজটি ইংরেজি V অক্ষরের মতো দেখতে হয়।

 আফ্রিকান মাগুরের বক্ষপাখনায় কাঁটা দেশি মাগুরের মতো তীক্ষ্ণ ও বিষাক্ত নয়। 

তাই দেশি মাগুরের কাঁটা লেগে গেলে এর যন্ত্রনায় বুঝিয়ে দেবে এটি আসল দেশি মাগুর।


আরও পড়ুন ক্লিক করে – 

হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা 

বায়ুদূষণ কমাবে কৃত্রিম পাতা।

অর্থনৈতিক কোড সুমুহ 


আমি উপরে হাইব্রিড মাগুর ও দেশি মাগুর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।‌ 

এছাড়া দেশি মাগুর মাছ চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। 

আশা করি এই পোস্টটি থেকে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টটি পড়ার জন্য ।

এই পোস্টটি ভালো লাগলে এবং উপকারে আসলে শেয়ার করতে ভুলবেন না ।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *