মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো Pdf

পোস্টটি শেয়ার করুন

আপনি কি অনলাইনে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো Pdf  | মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ  |মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ | ( Moghol Samrajjo ) সম্পর্কে জানতে চাইছেন,

যদি তাই হয়, 

আপনি সঠিক পোস্টে এসেছেন।

আমার এই পোস্টটি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ  ( ইতিহাসের ) দারুন নোট ( Free Pdf )।  আপনি পরীক্ষায় যদি এই নোটটি  লিখতে পারেন তাহলে আপনি ফুল মার্কস পাবেন।

পোস্টটিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ Pdf

ভূমিকা

কালের নিয়মে আজ যার উত্থান, একদিন তার পতন হবেই। কারণ উত্থান ও পতন চক্রাকারে আবর্তিত হয়। বাবরের হাত ধরে যে মোগল সম্রাজ্যের সূচনা ঘটেছিল তা ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট আর্থার স্মিথের মতে—– “ মোগল সাম্রাজ্যের পতন এমন আকস্মিকভাবে হয়েছিল যে আপতদৃষ্টিতে তা বিস্ময়কর বলে বোধ হয়। কিন্তু ইতিহাসের ছাত্র আশ্চর্য হয়ে ভাববে ওই সাম্রাজ্যে অনেক আগে ভেঙে না পড়ে এতদিন টিকল কী করে।”

ডাউনলোড পিডিএফ ( মুঘল সাম্রাজ্য )

স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র

মোগল শাসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সম্রাটদের ব্যক্তিগত চরিত্র, বুদ্ধি, কর্মনিষ্ঠা ও সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল। স্বেচ্ছাচারী একনায়কতন্ত্রের সকল ত্রুটিই মোগল সাম্রাজ্যে বাসা বেঁধেছিল। মোগল সম্রাজ্যের ওপর জনসাধারণের স্থায়ী সমর্থন ও আনুগত্য ছিল না। ভি. এ. স্মিথের মতে, সমস্ত এশিয়ান সাম্রাজ্যের মতোই মোগল সাম্রাজ্যের শিকড় ছিল দুর্বল।

সাম্রাজ্যের বিশালতা

মোগল সাম্রাজ্যের বিশাল আয়তন এই সাম্রাজ্যের পতনের এক অন্যতম কারণ। কাবুল থেকে আসাম এবং কাশ্মীর থেকে মহীশূর পর্যন্ত সুবিশাল সাম্রাজ্যকে একটি মাত্র জায়গা থেকে সুষ্ঠুরূপে শাসন করা একজন শাসকের পক্ষে কোনোদিনই সম্ভব নয়।

এছাড়াও সে সময় রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অনুন্নত। তাই রাজধানী দিল্লি থেকে দূরে অবস্থিত প্রদেশগুলিতে একই শাসন ব্যবস্থার অধীনে রাখা ছিল দুরূহ কাজ।

আরও পড়ুন ক্লিক করে –

মুঘল যুগে সাহিত্যের বিবরণ

সামরিক দুর্বলতা

মোগল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সামরিক দুর্বলতাও বিশেষভাবে দায়ী। মোগলগণ সামরিক জাতি হলেও তাদের মধ্যেও বিভিন্ন দুর্বলতা দেখা দিতে শুরু করেছিল। ভারতবর্ষে যতদিন যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল ততদিনই মোগলরা সামরিক দিক থেকে সক্রিয় ছিল।] কিন্তু যখন যুদ্ধের প্রয়োজন মিটে গেল তারপর থেকে মোগল সৈন্যরা অলস হয়ে পড়তে থাকে। ফলস্বরূপ সামরিক বাহিনী নিষ্ক্রিয় ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়

মোগল সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালীরূপে গড়ে তোলার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। বিশাল সেনাবাহিনীকে পুষতে গিয়ে ও বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে রাজকোশ শূন্য হয়ে পড়ে। তারাচাঁদের মতে বিদেশি শাসন প্রতিষ্ঠা সাম্রাজ্যের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছিল এবং একটি নতুন সমাজব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

অর্থনৈতিক হাল এমনই হয়ে পড়ে যে সৈন্য ও রাজকর্মচারীদের বেতন দেওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড মন্তব্য করেছেন—“ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যে দেউলিয়া, তা স্পষ্ট হয়ে উঠল।”

অভিজাতদের দলাদলি

ঔরঙ্গজেবের পরবর্তীকালের উত্তরাধিকারীগণের অধঃপতনের সাথে সাথেই অভিজাত শ্রেণিদেরও অধঃপতন ঘটে। প্রথমদিকে এই অভিজাত সম্প্রদায় ছিল মোগল সাম্রাজের অন্যতম স্তম্ভ। পরবর্তীকালে এই অভিজাতদের নিজেদের মধ্যে দলাদলি ও ক্ষমতার লালসা ভীষণভাবে বেড়ে যায়। ইরানি, তুরানি, হিন্দুস্থানি প্রভৃতি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাম্রাজ্যের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়। ফলে এদের সাম্রাজ্যবিরোধী কার্যকলাপ মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটায়।] বিপান চন্দ্র বলেছেন—অভিজাতরা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের থেকে নিজ নিজ স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেই প্রাধান্য দিয়েছিল এবং সাম্রাজ্যের ঐক্যকে ক্ষুণ্ণ করেছিল।

জায়গিরদারি দ্বন্দ্ব

মূলত ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালের শেষ দিক থেকে জায়গিরদারি সংকট তীব্র রূপ ধারণ করে। এর ফলে মনসবদারি সংগঠন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মনসবদারদের নগদ বেতনের পরিবর্তে জায়গির দেবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। জায়গরি প্রথা পরবর্তীকালে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু কৃষিকার্য ছিল অনুন্নত তাই নতুন সম্পদও সৃষ্টি হয়নি, ফলে নতুন জায়গিরও সৃষ্টি হয়নি।] পরবর্তীকালে জায়গির প্রাপকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজদরবারে দলাদলি। শুরু হয়ে যায়।

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি

ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি মোগল সাম্রাজ্যের পতনের এক অন্যতম প্রধান কারণ। তাঁর সুদীর্ঘ ২৮ বছর দাক্ষিণাত্যে অবস্থান ও একের পর এক ভুল কার্যাবলি মোগল সাম্রাজ্যের পতন ঘটাতে সাহায্য করেছিল। তিনি দীর্ঘদিন দাক্ষিণাত্যে থাকায় উত্তর ভারতে এক চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। স্মিথের মতে- দাক্ষিণাত্য তাঁর সমস্ত মর্যাদা ও সাম্রাজ্যের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

কৃষক বিদ্রোহ

মোগল সাম্রাজ্যের পতনের এক প্রধান কারণ হল কৃষক অসন্তোষ ও কৃষক বিদ্রোহ। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে কৃষকগণ ছিল খুবই অসহায়। তাদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। করের বোঝা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। অভিজাতদের জায়গির হস্তান্তরের ফলে কৃষকদের অবস্থা হয়েছিল বলির পাঁঠার মতো। কৃষকরা খাজনা দিতে না পেরে চাষবাস বন্ধ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হত। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে দস্যুতে পরিণত হয়েছিল।] যখন স্যামি, জাঠ, শিখ বিদ্রোহ ঘটেছিল কৃষকরা সেই বিদ্রোহে মদত দিয়েছিল। কৃষকদের উপর এই অত্যাচার পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

নৌশক্তির দুর্বলতা

মোগল সেনাবাহিনীতে নৌশক্তির অভাব ছিল। মোগল সম্রাটদের মধ্যে একমাত্র আকবর ছাড়া কেউই নৌবাহিনী গড়ে তোলার দিকে নজর দেননি। নৌশক্তিতে শক্তিমান ইউরোপীয় জাতিগুলিকে বাধাদান করার ক্ষমতা মোগল সেনাবাহিনীর ছিল না। ঐতিহাসিক স্মিথের মতে, “মধ্য এশিয়ার স্থলভাগ থেকে আগত মোগলরা নৌশক্তির গুরুত্ব বুঝতে পারেনি।”

উজীরত সমস্যা

মোগল রাজত্বকালে উকিল ও উজির ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদের অধিকারী। সম্রাটের প্রতিনিধিরূপে উকিলের পদমর্যাদা ছিল সবার উপরে। আর প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উজিরের ক্ষমতা সব থেকে বেশি। আকবর প্রথম উজিরের ক্ষমতা কমানোর জন্য কয়েকটি দেওয়ান নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে ঔরঙ্গজেবের আমলে উজির পদকে কেন্দ্র করে অভিজাতদের মধ্যে স্বার্থদ্বন্দ্ব বাধে।] এই দ্বন্দ্ব ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে যা মোগল স্থায়িত্বে সংকটের সৃষ্টি করে।

জাতীয়তাবাদের অভাব

মোগল রাজত্বকালে ভারতবাসীর মধ্যে সংস্কৃতির ঐক্য গড়ে উঠলেও রাজনৈতিক সংহতির অভাব ছিল। দেশের থেকেও তারা ব্যক্তিকে, গোষ্ঠীকে, ধর্মকে প্রাধান্য দিত।] ডঃ বিপান চন্দ্রের মতে, জনসাধারণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের অভাব মোগল সাম্রাজ্যের পতনের এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

বৈদিশিক আক্রমণ

সাম্রাজ্যের মধ্যেকার বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি যখন মোগল সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকে কুরে কুরে খাচ্ছে ঠিক সেই সময় নাদির শাহ ও আহমদ শাহ আবদালির নৃশংস ও ভয়াবহ আক্রমণ মোগল সম্রাজ্যের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। এই আক্রমণের ফলে মোগল অস্তিত্ব একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।

মন্তব্য

মোগল সাম্রাজ্য শুধু ভারতবর্ষ নয়, বিশ্বের মধ্যযুগের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মোগল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাবর (১৫২৬ খ্রিঃ) থেকে শুরু করে শেষ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের (১৮৪৩ খ্রিঃ) মধ্যবর্তী প্রায় তিনশত সতেরো বৎসরে ১৭ জন রাজার রাজত্বকাল ছিল বর্ণময় ও ঘটনাবহুল রাজনীতির উজ্জ্বল সমাহার। ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুন দ্বীপে নির্বাসনে পাঠালে মোগল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ অস্তিত্বটুকুও বিলুপ্ত হয়। বিপান চন্দ্রের মতে, “ক্রমিক অবক্ষয়েই মোগল সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।”

আরও পড়ুন ক্লিক করে –

দ্বৈত শাসনব্যবস্থা

নুরজাহান চক্র টিকা 


আশা করি এই পোস্টটি থেকে আপনি –  মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো Pdf  | মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ  |মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ | ( Moghol Samrajjo )| সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আপনাকে জানাই অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টটি পড়ার জন্য।

এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment