লোক আদালত

লোক আদালত

পোস্টটি শেয়ার করুন

লোক আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনি কি লোক আদালত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী

তাহলে আপনি সঠিক আর্টিকেলে এসে পৌঁছেছেন।  

আমি বা আপনি লোক আদালত সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন নেটে সার্চ করি। তাই আমি আপনাদের উপকারের জন্য এই পোস্টটি লিখেছি। 

আপনি যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টটি থেকে খুঁজে পাবেন তা হলো – লোক আদালতের গঠন ও কার্যাবলী । লোক আদালত কি । লোক আদালত কবে গঠিত হয় । লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ।

পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিজের জ্ঞানকে বাড়িয়ে তুলুন।

লোক আদালত কাকে বলে

গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠাতা করা। সেজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো ভারতেও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে।

কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আদালতগুলির পক্ষে বিভিন্ন মামলার দ্রুত শেষ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই ভারতের বিভিন্ন আদালতের ওপর – ১) অস্বাভাবিক চাপ হ্রাস ২) তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব – পূর্ণ মামলাগুলোর তারাতারি শেষ করা  এছাড়া ৩) নাগরিকদের কার্যত বিনা খরচে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে লোক আদালত গঠন করা হয়।

আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে এই আদালতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাই লোক আদালত ব্যবস্থাকে ‘ বিরোধ নিষ্পত্তির এক অভিনব বিকল্প রূপ ‘ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে গুজরাটে প্রাথমিকভাবে লোক আদালতের যাত্রা শুরু হলেও ” আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৮৭ ” কার্যকর হওয়ার ফলে বর্তমানে লোক আদালতগুলি একটি আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে।

এরপর ১৯৯৮ সালে আবুল হাসান ও জাতীয় আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ বনাম দিল্লি বিদ্যুৎ পর্ষদ ও অন্যান্য মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অনিল দেব সিং ১৯৯৯ সালের ১৫ জানুয়ারি রায় দেন যে ,নাগরিকদের সঙ্গে ভারত সরকারের এবং এবং ভারত সরকারের সঙ্গে তার কর্মচারীদের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক স্থায়ী লোক আদালত প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

এরপর ১৯৯৯ সালের ১৪ মে দিল্লি হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন যে –

সব সরকারি মন্ত্রক ও দপ্তরে লোক আদালত গঠন করতে হবে।

আরও পড়ুন ক্লিক করে – ভারতের হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ।

লোক আদালতের গঠন

আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ আইনটি ১৯৯৪ সালে সংশোধিত হয়। সংশোধনীয় ১৯ ( ১ ) নং ধারায় বলা হয় যে , কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা ও তালুকে আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। 

 এই কর্তৃপক্ষের হাতে লোক আদালত গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।

১৯ ( ২ ) নং ধারা অনুসারে একটি অঞ্চলের লোক আদালত ক ) কর্মরত কিংবা অবসারপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় আধিকারিকদের এবং

খ ) অন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হবে।

অন্য কয়েকজন ব্যক্তির সংখ্যা কত হবে, তা লোক আদালত গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ স্থির করে দেয়। 

সাধারণভাবে একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও একজন সমাজসেবীকে লোক আদালতের অন্যান্য সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। 

পূর্বোক্ত আধিকারিক এরূপ আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে কার্য সম্পাদন করেন।

লোক আদালতের কার্যাবলী

যেসব বিষয় অত্যন্ত জটিল প্রকৃতিসম্পন্ন নয় ,‌ সেইসব বিষয় সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি লোক আদালত করে থাকে। 

আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কিংবা বিচার শুরুর আগের অবস্থায় কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ কিংবা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিরোধটিকে লোক আদালতের কাছে পাঠাতে পারেন।

তবে কোনো একটি বিরোধে লিপ্ত উভয় পক্ষই যদি লোক আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে নিতে রাজি হয়, তাহলেই কেবল সংশ্লিষ্ট বিরোধটিকে এরুপ আদালতের কাছে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।

সাধারণভাবে ক্ষতিপূরণ দাবি, বণ্টন – সংক্রান্ত মামলা, বিমা কোম্পানি গুলির কাছ থেকে অর্থ দাবি ও

বিবাহ – সংক্রান্ত বিষয়ের নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে লোক আদালত গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছেন।

লোক আদালতের কার্যপদ্ধতি

বিবাদমান পক্ষ দুটির মধ্যে যে কোনো একটি পক্ষকে সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিখিতভাবে লোক আদালতে আবেদন জানাতে হয়।

এরুপ আবেদনপত্র পরীক্ষার পর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তির দায়িত্ব এই আদালত গ্রহণ করেন।

যে কোন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে এই আদালত ন্যায়, সত্যতা, সমদর্শিতা এবং অন্যান্য আইনগত নীতি অনুসরণ করে থাকেন।

লোক আদালতের কার্যপদ্ধতি বিচার – বিভাগীয় কার্য – পদ্ধতির অনুরূপ। তাই এরূপ আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ, দলিলপত্র তলব , যে কোন সরকারি নথিপত্র তলব প্রভৃতি করার অধিকারী।

আদালতের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি মেনে নিতে বাধ্য এবং আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করা হয়।

লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। তবে কোনো একটি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে এরূপ আদালত ব্যর্থ হলে বিবাদমান পক্ষগুলি সাধারণ আদালতের কাছে বিচারপ্রার্থনার জন্য যেতে পারে।

এরূপ আদালতে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এবং বিনা খরচে বিচারকার্য সম্পাদিত হয় বলে লোক আদালতের জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।


আরও পড়ুন – ভারতের সুপ্রিম ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি , হওয়ার যোগ্যতা , মেয়াদ , অপসারণের ক্ষমতা। 

আরও পড়ুন – ভারতের জাতীয় জিনিসের নাম

আশা করি এই পোস্টটি আপনার উপকারে এসেছে।

আশা করি আপনি লোক আদালত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য। 

ভালো লাগলে বন্ধু – বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না


পোস্টটি শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *